Where people fear the government you have tyranny. Where government fears the people you have liberty- John Basil Barnhill (1914)
Government is not reason, it is not eloquent; it is force. Like fire, it is a dangerous servant and a fearful master- George Washington.
এ উদ্ধৃতি দু’টি নিয়ে আলোচনার আগে একটি ক্ষীণ সম্পর্কিত বিষয় লক্ষ করা যেতে পারে। কারণ, শিরোনামের সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে। বিষয়টি হলো ভারতের সাবেক সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও বর্তমানে ভারতীয় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জাস্টিস মারকান্ডে কাটজুর বক্তব্য। তার পুরনো বক্তব্যগুলোর মতোই ভারতীয় পত্রপত্রিকা ও বোদ্ধা জনগণের মধ্যে এবারের বক্তব্যটিও ঝড় তুলেছে। জাস্টিস কাটজু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘ভারতের ৯০ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে পিছিয়ে আছে।’ তিনি তাদের ‘বোকা-গাধা (idiot, fools) বলেছেন। তিনি বলেছেন তাদের মানসিকতা ‘যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত’ না হওয়ায় তাদের মন ‘বর্ণপ্রথা, সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কার’ (Casteism, Communalism and Superstition) আচ্ছন্ন করে রাখে। ফলে ুদ্র স্বার্থবাদী এবং ক্ষমতালোভীরা তাদের সহজেই ব্যবহার ও পরিচালিত করতে পারে। তার মতে, ভারত এ জন্য ক্রমেই পেছনে পড়ে যাচ্ছে এবং তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, একসময় ভারতের অস্তিত্বেই হয়তো হাত পড়বে। তিনি এ স্বার্থবাদীদের অযোগ্য এবং অপরাধীর সাথে তুলনা করেছেন। কয়েক দশক ধরে এমন মানুষেরা প্রায়ই গদি দখল করছে। এমন শাসকদের কারণে ভারতে সামাজিক বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে। তাদের নিয়ে তিনি মজার উদাহরণও টেনেছেন। ‘শতকরা ৯০ ভাগ ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র দিয়ে ভাগ্য গণনায় বিশ্বাসী।’ তিনি জ্যোতিষীদের ‘ধাপ্পাবাজ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন’ (humbug and superstitious) বলে অভিহিত করে প্রশ্ন করেছেন, গ্রহগুলো কেমন করে জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? তিনি দেখিয়েছেন, যে টিভি যত জ্যোতিষচর্চা করে, তার টিআরপি (দর্শকপ্রীতি) তত বেশি।
ক্রিকেটের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এখন এটাকে সংবাদমাধ্যম ও ব্যবসায়ীরা ধর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আফিমের নেশায় যেন জনগণকে বুঁদ করে ফেলেছে। অথচ ৮০ শতাংশ লোকের সমস্যা হলো দারিদ্র্য, চাকরি, খাদ্য, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থান। এ নিয়ে এরা মাথা ঘামাচ্ছে না।
আবার আন্না হাজারের বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের মাতামাতিকে তিনি ম্যাকবেথের সেই বিখ্যাত উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এগুলো মাত্র বাগাড়ম্বর। আসলে দুর্নীতির গায়ে কোনো স্পর্শ লাগেনি।’ (a tale/told by an idiot, full of sound and fury/signifying nothing) জাস্টিস কাটজু তার স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে মাঝে মাঝে ঝড় তোলেন। বিশেষ করে ভারতীয় সাংবাদিকদের ‘মেধাহীন লেজুড়বৃত্তিকে’ তীব্র কশাঘাত করে মন্তব্য করেছেন, তাদের বেশির ভাগই ‘নিম্নমানের বুদ্ধিজীবী’। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় অপরাধী এবং অযোগ্যদের বিশাল উপস্থিতি সমাজের সর্বস্তরে তার প্রভাব পড়ছে।
তবে জাস্টিস কাটজুকে সমর্থন না করেও বিশালসংখ্যক ব্লগার একটি মূূলসুরকে নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা বলেছে, বেশ কয়েক দশক ধরে ‘অযোগ্য ও অপরাধীরা’ জনগণকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে তাদের চিরাচরিত তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। তাদের প্রচারণা ও নিষ্পেষণের যাঁতাকলে জনগণকে এতই ব্যস্ত রাখা হচ্ছে যে, তারা তাদের সাধারণ চিন্তার অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলছে। তারা গতকাল বা আগামীকালের ভাবনার মাঝে ফাঁকটুকু পাচ্ছে না আজকের জীবনে।
আসলে এ অবস্থা এখন তীব্র হলেও এর অবস্থান খুব পুরনো। আর তাই কয়েক শতাব্দী আগেও এমন অবস্থার বর্ণনা মেলে। এমন সরকারকে বলা হয় কাকিসটোক্র্যাসি। এমন সরকারগুলোর দাপট ও তাণ্ডবতা তীব্রতা লাভ করে তত, যত তাদের ব্যর্থতার বোঝা। এখন এ বিষয় নিয়ে বিকল্প সংবাদমাধ্যম এবং বোদ্ধা প্রতিবাদী রাজনৈতিক অঙ্গনে এর বিশাল আলোচনা চলছে। এ বিষয় নিয়ে আলোচকেরা এ ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন যে, প্রথম বিশ্বের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে এখন কাকিসটোক্র্যাসির রাজত্ব চলছে। এবং জনগণকে অবধারিতভাবে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে। এমন অভাবিত ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে যে, মানুষের অনুভূতি হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠবে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে কাকিসটোক্র্যাসি কী? উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুসারে এটা ‘অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের’ সরকার। এটা গ্রিক শব্দ ‘কাকোস’ অর্থাৎ খারাপ (bad) থেকে এসেছে। কাকোসের বহুবচন কাকিসটোস অর্থাৎ ‘অত্যন্ত খারাপ’ (worst)।
এমন সরকারের সংজ্ঞা আগে থাকলেও ১৮২৯ সালে ‘মিসফরচুন অব এলফিন’ উপন্যাসে থোমাস লাভ পিকক প্রথম লিখিতভাবে শব্দটি ব্যবহার করেন। এরপর ১৮৭৬ সালে ব্যঙ্গাত্মক লেখক জেমস রাসেল লোয়েল তখনকার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এক চিঠিতে প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের সরকারটি জনগণের (Is our government of the people, by the people, for the people or a Kakistocracy rather, for the benefit of Knaves at the cost of fools?) নাকি শয়তানের (Knave) স্বার্থে, যারা বোকা জনগণকে জিম্মি করেছে (at the cost of fools)। মার্কিন নিবাসী অতনু দে ভারতের কথা লিখতে গিয়ে বলেছেন, যখন সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ও নৈতিকতাহীনদের (most corrupt and least principled) কাকিসটোক্র্যাসির সরকারের বলা হয়, তখন ভারতের উদাহরণটি আসে সর্বাগ্রে। অথচ ভারত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত।
উইকিপিডিয়ার মতে, নানা সময়ে ৩২ ধরনের সরকার চালু ছিল, যদিও সাধারণ মানুষ গুটিকয়েক ধরনের কথা বলে থাকে। যেমন গণতন্ত্র। অথচ এপিসটেমোক্র্যাসি, জেনিওক্র্যাসি, লোগোক্র্যাসি, কেপ্টোক্র্যাসি, ক্রিটোক্র্যাসি, থিওডেমোক্র্যাসি, টিমোক্র্যাসি প্রভৃতি সরকার ছিল এবং এখনো চালু আছে ডেমোক্র্যাসির মধ্য দিয়ে। মজার কথা হলো, সরকারের এই নামগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসেছে গ্রিক থেকে, যেখানে প্রথম সরকারের প্রচলন হয়। ডেমোক্র্যাসির জন্মও এখানে। আজ সেই গ্রিস প্রথম বিশ্বে সবচেয়ে রুগ্ণ গণতন্ত্র।
যাই হোক, কয়েক ধরনের সরকার এখন ডেমোক্র্যাসির পৃষ্ঠপোষকতায় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। যা চলছে তা হলো প্লুটোক্র্যাসি ধনীদের সরকার; টেকনোক্র্যাসি; থিওডেমোক্র্যাসি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত; ক্রিটোক্র্যাসি বিচারকদের দিয়ে পরিচালিত সরকার। এ সরকার চালিত হয় ক্রিটারকি দিয়ে, যেখানে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কর্মকাণ্ডের জন্য যে রায় দেন; অলিগার্কি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের সরকার; অটোক্র্যাসি এবং অ্যানারকি আইন অমান্যকারী সরকার।
খুবই লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রথম বিশ্বসহ দুনিয়াব্যাপী অধুনা ক্রিটারকি চলছে। বিচারকেরা তাদের ক্রিটারকি রায় দিয়ে সরকার পরিচালনা অথবা প্রভাবান্বিত করার কাজে ব্যস্ত। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে কাকিসটোক্র্যাসির নেতারা এমন বিচারক নিয়োগ দেয়, যাতে তারা তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন বিচারকেরা দলের সাবেক ক্যাডার বা দলীয় হন। তাদের রায় জনগণকে হতাশ করলেও বোদ্ধা ব্যক্তিরা সহজেই বুঝতে পারেন। এরা সমাজের সোচ্চার প্রতিবাদীদের শক্তি ও বিচারালয়ের অ™ভুত সমন্বয় ঘটিয়ে স্তব্ধ করার প্রয়াস পান। যেমন সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা এবং অভূতপূর্ব আদালত নির্দেশনা, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাগরিক অধিকার হরণ করে।
তবে এসবের মূলে কাজ করে ফ্যাসিবাদ যা অবশেষে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করে। কাকিসটোক্র্যাসির শাসকেরা তাদের অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও অপরাধকে আড়াল করতে সরকারের সব অঙ্গকে অনৈতিক পন্থায় ব্যবহার করে। এখন এ যুক্তি সর্বগ্রাহ্য যে, সব সরকারই পরিণতিতে কাকিসটোক্র্যাসিতে পর্যবসিত হয়; আবার এটাও বলা হয়, সব সরকারই এ অবস্থা থেকে শুরু করে। পরে তারা ভালো বা খারাপ হয়। সেকুলারিজম প্রবক্তা বিখ্যাত লেখক লরেন্স ডাবলু ব্রিট বলেছেন, এরা সবাই অন্তত ১৪টি পন্থা কম-বেশি ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে এবং টিকে থাকতে। এগুলো হলো : ০১. আকর্ষণীয় স্লোগান, দেশের পতাকা এবং বিশেষ ধরনের পোশাক পরে তাদের নির্ধারিত জাতীয়তাবাদ তীব্রভাবে প্রচার করে প্রতিবাদীদের স্তব্ধ বা নির্মূল করা; ০২. মানবাধিকারকে নিন্দা করা বা এমন আলোচনাকে প্রতিরোধের চেষ্টা। কারণ, এরা নিজেরাই মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সর্বদা নিয়োজিত থাকে; ০৩. প্রতিবাদ ও প্রতিবাদীকে এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রচারণা শুরু করা এবং নিজেদের অন্যায়-ব্যর্থতাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া; ০৪. সরকারের সব সশস্ত্র বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক মতবাদের আদর্শধারী করা এবং তার জন্য চাকরিচ্যুত, বিচার ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের ভয় দেখানো বা নেয়া হয়; ০৫. যৌনতাকে প্রগতিবাদের অঙ্গ হিসেবে উৎসাহিত করে যুব সম্প্রদায়কে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে ভোগের সামগ্রী হিসেবে অভিহিত করা; ০৬. সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়া, যাতে জনগণ তাদের অপকর্ম সম্পর্কে কোনো খবর না পায়; ০৭. জাতীয় প্রতিরক্ষা বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড মাতামাতি করা এবং এর মাধ্যমে প্রতিবাদী এবং বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ নাস্তানাবুদ বা নির্মূল করা; ০৮. শাসকগোষ্ঠী ও ধর্মীয় নেতাদের সমন্বয় সাধন। যেসব ধর্মীয় নেতা এ সমন্বয় কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে, তাদের জেলজুলুম ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করা; ০৯. করপোরেট শক্তিকে সাহায্য করা; ১০. শ্রমজীবীদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের সব সংগঠনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা অথবা নির্মূল করা; ১১. সুশীলসমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভীতির রাজ্য স্থাপন করা। এ কাজে শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা এবং নিয়ন্ত্রণ করা; ১২. অপরাধ নিয়ে প্রবল প্রচার চালিয়ে নিজেদের অপরাধকে লুকিয়ে রাখা এবং বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ব্যবহার করা; ১৩. দুর্নীতি নিয়ে প্রচণ্ড আলোচনা ও কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদী ও বিরোধীদের শায়েস্তা করা; ১৪. নির্বাচনকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পুলিশ-প্রশাসন-বিচারকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলা।
এ পদ্ধতিগুলো তৃতীয় বিশ্বের কাকিসটোক্র্যাসির অনুসারীরা গণতন্ত্রের নামে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করছে। এমনকি প্রথম বিশ্বেও এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তাই রেডিও আমেরিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টার টিম কেলি সম্প্রতি দ্য পুলিশ স্টেট ইজ হেয়ার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘যারা ভাবছেন সুদিন সামনে এবং বিপ্লব এলো বলে, তারা জানেন না রাতের আঁধারে গান গাইতে গাইতে তা চলে গেছে।’ তিনি অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন।
তবে কেলি যে কর্মকাণ্ডগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, তা বিশ্বব্যাপী তথাকথিত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নিবিড়ভাবে ব্যবহার করছে। যেমন নিবর্তনমূলক আইন, বিরোধীদের বিচারবহির্ভূত শাস্তি এবং নির্মূলকরণ, বিনা চার্জে জেলে প্রেরণ। এমনকি রাষ্ট্রের আইন সাধারণ মানুষের সহায়তায় আসছে না। বরং, সাবেক মার্কিন অর্থসচিব পল ক্রেইগ রবার্টসের মতে, এখন আইন জনগণের রক্ষক নয়, এটা এখন সরকারের হাতের একটি অস্ত্র, যা দিয়ে জনগণকে শায়েস্তা করা যায়।
টিম কেলির একটি মন্তব্য যেন বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য করা হয়েছে। ‘দেশের বিচারালয়গুলো যেন পুলিশ স্টেট না ঠেকিয়ে বরং এর বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’ ('The nation’s courts, rather than checking the police states, relentless expansion, have become its enabler.') কেলি বলছেন, সঙ্গত কারণেই জনগণ এখন সরকারকে ভয় পাচ্ছে। বিচার পাচ্ছে না। সেটা আর এখন আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ কাকিসটোক্র্যাসি কায়েম হয়ে গেছে, যেখানে ‘অযোগ্য-দুর্নীতিবাজ-অপরাধীরা’ পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করে নিজের ক্ষমতা ও স্বার্থ রক্ষা করছে। অন্য কথায়, এখন কাকিসটোক্র্যাসির রাজত্ব।
তাই জন বার্নহিলের মন্তব্য স্মরণ না করে পারা যায় না। যখন জনগণকে ভয় করতে হয় সরকারকে তখন বুঝতে হবে প্রজাপীড়নের শাসন তথা টাইরেনি কায়েম হয়েছে। সরকার জনগণের তোয়াক্কা করলে, জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতা ভোগ করত। বিখ্যাত Born under a bad sky-এর লেখক জেফরি সেন্ট কেয়ার আধুনিককালের সরকারও মুসলমানদের সংবাদমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের কৌশলী পদ্ধতিগুলো বর্ণনা করে জন লিলবার্নকে স্মরণ করেছেন। ১৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস-১ এর এবং চার্চের অনধিকার চর্চার বিরুদ্ধে এক লেখার কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তবে ওলিভার ক্রমওয়েল এবং পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতিবাদে তাকে মুক্ত করা হয়। লিলবার্ন সারাজীবন বক্তব্যের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। এমনকি মহাকবি মিলটন তার কর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে বক্তব্যের স্বাধীনতার সপক্ষে বিখ্যাত অ্যারিয়োগেজেটিকা ৪০০ বছর আগে রচনা করেন। লিলবার্ন গোপন বিচার ও পক্ষপাতিত্বের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সর্বপ্রথম এটা সর্বগ্রাহ্য করেন যে, রাষ্ট্রের সবাই সমান এবং সবার বলার অধিকার আছে। আদালতকে এ বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। সেন্ট জেফরি প্রশ্ন করেছেন সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে, ‘এখন লিলবার্ন (বেঁচে থাকলে) কী করতেন? (Intolerable opinions in an age of secret tribunals)। জেফরি বলেছেন, লিলবার্ন কখনোই হার মানতেন না।
আর সত্য কথাই বলেছেন জর্জ ওয়াশিংটন, ‘সরকার আগুনের মতো, যা চাকর হিসেবে বিপজ্জনক এবং প্রভু হিসেবে ভয়ঙ্কর।’
মজার কথা হলো, রাজনীতিবিদেরা হলেন সেই দল, যারা সমস্যা সৃষ্টি করেন, তার প্রতিবিধানের জন্য জনগণের কাছে যান এর সমাধানের জন্য। সমাধান? তাদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। রাজনীতির এটা একটি অমোঘ বিধান যেÑ সঙ্ঘাত, মিথ্যা ও অনাচার ছাড়া রাষ্ট্রাচার প্রায় অসম্ভব। আর এই মিথ্যা-সঙ্ঘাত-দুর্নীতিকে প্রতিহত করার সংগ্রামও চলমান।