২০১২-০৩-২৪
সমপ্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ওপর নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস, অধিকার, এমআরটি ও পুলিশ সূত্র অনুসরণ করে প্রতিবেদনগুলোতে ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যনৱ গত ৪৯ মাসে ঘটিত হত্যাকাণ্ড, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, সীমানৱ সন্ত্রাস, সড়ক দুর্ঘটনা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা এক কথায় ভয়াবহ। দেখা গেছে, একসময়ে এক অপরাধ বাড়ছে আর অন্য একসময়ে অন্য অপরাধের আধিক্য নজরে পড়ছে। তবে অপরাধের নিম্নগতি কোথাও নেই। আর অপরাধী চক্র ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সংবাদপত্রগুলো অবশ্য মাসিক হিসাবও দিচ্ছে। উলেস্নখযোগ্য বিষয় হলো, এ সংবাদগুলো যেন সবার ‘গা-সওয়া’ হয়ে গেছে। যেমনটি স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে হয়েছিল। যেন মানুষকে এমন যন্ত্রণা সইতেই হবে। সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব বোধগম্য। কারণ এসব অপরাধের প্রধান লৰ্য তারাই, যারা কখনো তাদের বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে, কখনো বা অপরাধী হিসেবে বা তাদের দোসর হিসেবে অপবাদ দিয়ে বা অভিযোগ এনে তাদের এই অপরাধের লৰ্য হিসেবে স্থির করা হচ্ছে। সবার কাছে অবাক হওয়ার বিষয় হলো- অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপৰ রম্নটিনের মতো সাফাই গেয়ে যাচ্ছে। এমনকি এরা শানিৱশৃঙ্খলার অবস্থা প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে তারস্বরে দাবি করে। কারণ কী?
এসব অপরাধের একটা আংশিক চিত্র তুলে ধরে আলোচনায় যাওয়া যেতে পারে। এ চিত্র ওপরের প্রশ্নের একটি জবাবও আংশিক দেবে।
এক সংবাদ অনুসারে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১-এর নভেম্বর পর্যনৱ খুনসহ ডাকাতি, চুরি, অপহরণ, শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, মাদক কেনাবেচাসহ পাঁচ লাখের বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মাঝে ২০০৯ সালে এক লাখ ৫৭ হাজার ১০৮টি; ২০১০ সালে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৪টি এবং ২০১১ সালের নভেম্বর মাস পর্যনৱ এ সংখ্যা এক লাখ ৩৭ হাজার। এ সময়ে সংবাদপত্রের ওপর হামলা-মামলা-খুনের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড মস্নান করে দিয়েছে। এদের হিসাব অনুসারে এ সময়ে ছয়জন সাংবাদিক নিহত, ২৮০ জন সাংবাদিক বিভিন্ন হামলায় আহত হন, লাঞ্ছিত হন ১১২ জন, হুমকির মুখোমুখি হন ৯৫ জন, মামলা হয় তিন ডজনের বেশি। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, সামান্য ঘটনার প্রতিবেদনের ওপর মানহানি মামলাসহ নানা ধরনের মামলার সংখ্যা বিশেষভাবে বেড়ে গেছে। অন্য একটি লৰণীয় বিষয় হলো, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে অথবা করার চেষ্টা চলছে। এসব ৰেত্রে আইনগত আশ্রয়ের আইনও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব ব্যাপকতা লাভ করছে। তবে নিবর্তনমূলক ব্যবস্থার জন্য তার প্রকাশ ঘটছে কম।
সবচেয়ে ভয়াবহ যে চিত্র এ প্রতিবেদনগুলো দিয়েছে তা হলো- খুন, রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বেওয়ারিশ লাশের ছড়াছড়ি। আর গুপ্তহত্যার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ২০১১ নভেম্বর পর্যনৱ খুন হয়েছেন ১২০০ ব্যক্তি। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫৯২ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৯০ জন। এসব নিহতের মাঝে আছেন কলেজশিৰক, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দ। নাটোর ও বড়াইগ্রামে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ সময় ইভটিজিংয়েই আত্মহত্যা করেছেন ১৫০ জন এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটজন অভিভাবক খুন হয়েছেন। শুধু ঢাকা শহর থেকেই উদ্ধার হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৬টি বেওয়ারিশ লাশ এবং সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক ১০০-এরও বেশি মানুষের কোনো খোঁজ মেলেনি।
গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে গুপ্তহত্যার ঘটনা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। ৯০ লাশের বর্ণনাগুলো ভয়াবহ। এর পরে রয়েছে আরো ভয়াবহ রিপোর্ট। ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যনৱ সীমানেৱ এক হাজার ১২ জনকে বিএসএফ হত্যা করে। আহত ও অপহরণ করে বহু নিরীহ বাংলাদেশীকে। গত তিন বছরের সবচেয়ে ভালো সম্পর্কের সময়েও ২৩১ জনকে বিএসএফ হত্যা করে। তবে স্মরণযোগ্য বিষয় হলো- ভারতের অন্য পাঁচটি দেশের সাথে তার সীমানৱ থাকলেও, সেসব সীমানেৱ বিশেষ করে তাদের সবচেয়ে বৈরী প্রতিবেশী পাকিসৱানের সীমানেৱ কোনো বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি গত ১০ বছরে। এক প্রতিবেদনে পাকিসৱানি দূতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সে দেশের জন্মের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যনৱ তাদের দেশের কোনো সীমানেৱই ভারতীয় বিএসএফ এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস পায়নি।
প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন এমনটি হচ্ছে বারবার। দীর্ঘ আলোচনা না করে, হয়তো বা তিনটি শব্দ দিয়ে এর কারণ বর্ণনা করা যায়। তা হোলো- অনৈতিকতা, অবৰয় ও ফ্যাসিজম। প্রথমে অনৈতিকতা- তার রাজত্ব পুরোপুরি কায়েম করলে জন্ম হয় অবৰয় এবং পরে ফ্যাসিজমের। আর এসবের মূলে ৰমতা ও সম্পদাহরণ। বলাই বাহুল্য, সাধারণ মানুষ নিজের যন্ত্রণাকে কখনো আহ্বান করে আনে না। তাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়। যেমন এখন বিশ্বব্যাপী ‘দারিদ্র্য’ নিয়ে চলছে ব্যবসায়। এবং সে ব্যবসায়ে সবাই ব্যসৱ। সুশীলসমাজ, করপোরেট ব্যবসায়ী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে দরিদ্র সাধারণ মানুষদের আরো শোষণ করছে, দরিদ্র দেশগুলোকে আরো নির্ভরশীল করে তুলছে। এখানে ৰমতাবান আর সম্পদলোভীদের এক কৌশলগত খেলা চলছে।
যেমন বাংলাদেশে এখন গরিব মানুষদের মাঝে শিৰাবিসৱারের নামে নানা অনানুষ্ঠানিক পাঠ্যদানের ব্যবস্থা ও অর্থ বিতরণের কর্মকাণ্ড চলছে। আর সংশিস্নষ্ট সংস্থা ও সরকার প্রতিদিনই এর সাফল্যের গীত গাইছে। কিন্তু বাসৱবতা হলো, শিৰা- যা সত্যিকারের বিসৱার লাভ করছে- তা সেই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাঝ দিয়েই। আর এখানে শুরম্ন হয়েছে ব্যবসায়ের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। এর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নেই। কারণ ৰমতাবানেরাই প্রধানত এ অসম ব্যবস্থার সাথে জড়িত। তবে কখনো কিছু ব্যবস্থা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে নিতে দেখা যায়। এগুলোর বেশির ভাগই সে প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য। আর এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত বিরোধী অংশের।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে সব পাওয়ার মাঝে কয়েকটি অত্যনৱ অনাকাঙিত অর্জনও ছিল। তা হলো- ৰমতাসীন ও তাদের সহযোগীদের নৈতিকতার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা, ৰমতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ, বিরোধী দমনে সীমাহীন অসংযত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতিতে আনন্দিত আহ্বান। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বললেন, ‘চাটার দল, সব খেয়ে যাচ্ছে।’ মজার কথা, এই চাটার দলের সবাই ছিল তার দলের লোক- যাদের বিরম্নদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বক্তব্য দিয়ে যন্ত্রণাকিষ্ট সাধারণ মানুষকে বিভ্রানৱ ও শানৱ রাখতে চাইলেন। সেই যে অনৈতিকতাপ্রসূত অনাচারের রাজত্ব কায়েম হোলো, তা গত চার দশকে শুধুই ডালপালা মেলেছে। যখনই কেউ এর সমালোচনা করেছেন, তাদের নানাভাবে নিন্দা করা হয়েছে। এটা তারা করেছেন তাদের অবৈধ সম্পদ ও ৰমতাকে রৰা করতে। এমনকি সমাজের প্রচলিত নৈতিকতাকেও তারা ভয় পান। কেননা মাত্র এই গুণটি তাদের ৰমতার অপব্যবহারকে সীমিত করে ফেলে এবং অবৈধ সম্পদ আহরণের পথে হয় বাধা। স্বাধীনতার পরের তিন বছরের অবস্থা একটু বিশেস্নষণ করলে দেখা যাবে যে, কত দ্রম্নত একটি ধনিক শ্রেণীর উদ্ভব হলো। সে সময়ে ৰমতাবান আর তো কেউ ছিল না। হঠাৎ করেই দেখা গেল সমাজের সম্মানিত ও অবস্থাপন্ন মানুষেরা হারিয়ে যাচ্ছেন আর তাদের স্থান দখল করছেন এই বিশেষ গোষ্ঠী, যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে পারঙ্গম।
নৈতিকতাহীন অবস্থা জন্ম দেয় অবৰয় ও ফ্যাসিজমের। এ দু’টি বৈশিষ্ট্য এমনই যে, এর ব্যবহার শুরম্ন হয়, কখনো শেষ হয় না। এর একমাত্র কারণ- ৰমতা। তাই বিখ্যাত মার্কিন রাজনীতিবিদ হেনরি অ্যাডামস ৰমতাকে একধরনের বিষের সাথে তুলনা করেছেন, যা অনৱর্নিহিত নৈতিকতাকে অন্ধ করে দেয় : Power is poison; and it is a poison, which blinds the eyes of moral insight and lames the will of moral purpose. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দাবিদারেরা কখনোই ভাবতে পারেন না এ দেশের জনগণেরও কোনো অধিকার আছে, কর্তব্য আছে, জনগণ ভাবতে পারে, স্বাধীন বক্তব্য দিতে পারে। যখন এসব ৰমতাবানের স্বার্থ রৰার প্রয়োজন হয়, তখনই তারা জনগণের বিশাল ত্যাগের ফিরিসিৱ দিয়ে, যেকোনো প্রতিবাদীকে ‘বলি’ দেয়ার জন্য তৎপর হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানপ্রণেতা জেমস ম্যাডিসন সম্ভবত এদের কথা ভেবেই স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারের চমৎকার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন : The accumulation of all powers, legislative, executive, judiciary, in the same hands... is the definition of tyranny. Ñ James Madison। গত চার দশক ধরেই ঠিক এই কর্মকাণ্ডটি ৰমতাবানেরা, বিশেষ করে স্বাধীনতার নেতৃত্বের দাবিদারেরা, অবিরাম চালু রেখেছেন। সম্ভবত এবারই ম্যাডিসনের বক্তব্যের পূর্ণ বাসৱবায়ন ঘটেছে।
ফলে দেখা যাচ্ছে আইন প্রণয়নকারী, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ডের মাঝে কোনো পার্থক্য লৰ করা যাচ্ছে না। বিচার বিভাগ যে বক্তব্য দিচ্ছে তা নির্বাহী বা আইন প্রণয়নকারীর মতোই প্রতিভাত হচ্ছে। বিচার ও রাজনীতির মাঝে কোনো পার্থক্য লৰ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বিচার বিভাগের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। জনগণের শেষ ভরসাস্থলও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এমনটি নতুন বলা যাবে না। ইউরোপে মধ্যযুগে এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। অ্যাডামস বলেছেন- এরপর যখন গণতন্ত্রের উদ্ভব হোলো, এ ৰমতাবানেরা কৌশলে একে নিজের স্বার্থে ব্যবহার শুরম্ন করল : The fact that democratic sentiment could be exploited to create a tyranny more sanguinary and terrible than those which it sought to ostensibly to destroy; that dream of equality, fraternity and liberty turned into nightmare.
অ্যাডামস যেন বাংলাদেশের ২০১২ সালের অবস্থার বিবরণ দিচ্ছেন প্রায় ১০০ বছর আগে। বর্তমানের ৰমতাসীনদের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর এক প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। থমাস জেফারসন বলেছিলেন, ‘স্বৈরাচার শুধু এটুকুই চায় যেন বিবেকবান মানুষ চুপ থাকে’ : All tyranny needs to gain a foothold is for people of good conscience to remain silent. আসলে গণতন্ত্রের উদ্ভবের পরে ৰমতালিপ্সু একদল মানুষ সব প্রথাকেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এরই পথ ধরে ফ্যাসিজমের জন্ম ও লালন। এসবের লালিত হওয়ার কারণ একটিই, তা হলো- সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষকে অন্য কোনো উপায়ে এত সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণে যা-ই নির্মাণ করছে- এই ৰমতালিপ্সুর দল তা কুৰিগত করে তাদের স্বার্থের কাজে লাগাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে গণতন্ত্রের অঙ্গনে। তাই তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতি এত উত্তপ্ত এবং জনগণ যন্ত্রণাকিষ্ট।
একটু নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ফ্যাসিবাদের দশটি পথের কথা এখানে উলেস্নখ করা যেতে পারে। নাওমি উলফের দেয়া হিটলার-মুসোলিনী-স্টালিনের পথগুলো হলো :
০১. Invoke a terryfying internal and external enemy : বাইরের ও ভেতরে শত্রম্নর কথা উলেস্নখ করে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেকোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে; প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করে এসব শত্রম্নদের বিরম্নদ্ধে জনগণকে শঙ্কায় ফেলতে হবে।
০২. Create a gulag : একবার সবাইকে ভয়ের মাঝে নীত করে সেই ‘গুলাগের’ সৃষ্টি করতে হবে যেখানে আইনের বাইরে হাজার হাজার মানুষকে অনৱরীণ রাখা হবে;
০৩. Develop a thug caste : এটা করার সাথে সাথে দলের একাংশ, বিশেষ করে যুব শ্রেণীকে নানা ধ্বংসাত্মক ও হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে- যেমন যুব, ছাত্র, কর্মী, শ্রমিক নামধারী সংগঠন- যা ইংরেজিতে বলে Thug caste- এদের অন্যায়কে সরকার সমর্থন করবে; ফলে সব সরকারি অন্যায়কে ‘গা-সওয়া’ মনে হবে এবং জনগণ প্রতিবাদের সাহস পাবে না।
০৪. Setup a surveillance system : অভ্যনৱরীণ কড়া নজরদারিব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে কোনো প্রতিবাদ বা সমালোচনা না হয়; এটা জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে বলে তারস্বরে প্রচার করতে হবে- তবে এর প্রধান কাজ হবে প্রতিপৰকে তীব্র হয়রানির মাঝে রাখা;
০৫. Harass citizens group : প্রতিটি দল চিহ্নিত করে তাদের নানা দুর্নামে ভূষিত করে, গোয়েন্দা ও দলীয় নানা বাহিনী দিয়ে অবিরাম হয়রানি করা;
০৬. Arbitrary detention of noted person : উলেস্নখযোগ্য ব্যক্তিদের যথেচ্ছ গ্রেফতার। যা নিয়ে এখন খবরের কাগজে প্রায়ই গ্রেফতার বাণিজ্যের কথা আসছে;
০৭. Target key persons : সমাজের বিভিন্ন মুখ্য ব্যক্তিদের লৰ্যে পরিণত করে তাদের ওপর নজর রাখা। এদের বিশ্বসৱ না মনে হলে এদের চাকরিচ্যুত, ব্যবসায় ৰতিকর বা অন্য যেকোনো উপায়ে এদের নিসৱব্ধ করে ফেলা;
০৮. Control the press : সবচেয়ে বড় কাজ সংবাদমাধ্যমকে সমপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। বারবার বন্ধ করে দিতে হবে অথবা হামলা-মামলা দিয়ে ভীত রাখতে হবে;
০৯. Dissent means treason : প্রতিবাদ অর্থ রাষ্ট্রদ্রোহ। কোনো আলোচনা, তথ্য বা বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করে তীব্র আন্দোলন করে, বশংবদের দ্বারা বিচারব্যবস্থায় নেয়া; এবং
১০. Suspend rule of law : আইনের শাসনের কথা জনগণকে ভুলতে বাধ্য করা হবে।
এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত এই ১০ অবস্থার মাঝ দিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। হিটলার আরো বলেছিলেন, ৰমতাবানদের মিথ্যে বলতে হবে, তবে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারণ জনগণ ভাবতেই পারে না সরকার এত বড় মিথ্যা বলতে পারে। তারপর সেই মিথ্যা বারবার বলবে, তখন আর জনগণকে নিয়ে ভাবতে হবে না। হিটলার তার ৰমতা চিরস্থায়ী
করার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সে চিত্র এখন
এত প্রকট।
সংবাদপত্রগুলো অবশ্য মাসিক হিসাবও দিচ্ছে। উলেস্নখযোগ্য বিষয় হলো, এ সংবাদগুলো যেন সবার ‘গা-সওয়া’ হয়ে গেছে। যেমনটি স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে হয়েছিল। যেন মানুষকে এমন যন্ত্রণা সইতেই হবে। সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব বোধগম্য। কারণ এসব অপরাধের প্রধান লৰ্য তারাই, যারা কখনো তাদের বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে, কখনো বা অপরাধী হিসেবে বা তাদের দোসর হিসেবে অপবাদ দিয়ে বা অভিযোগ এনে তাদের এই অপরাধের লৰ্য হিসেবে স্থির করা হচ্ছে। সবার কাছে অবাক হওয়ার বিষয় হলো- অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপৰ রম্নটিনের মতো সাফাই গেয়ে যাচ্ছে। এমনকি এরা শানিৱশৃঙ্খলার অবস্থা প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে তারস্বরে দাবি করে। কারণ কী?
এসব অপরাধের একটা আংশিক চিত্র তুলে ধরে আলোচনায় যাওয়া যেতে পারে। এ চিত্র ওপরের প্রশ্নের একটি জবাবও আংশিক দেবে।
এক সংবাদ অনুসারে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১-এর নভেম্বর পর্যনৱ খুনসহ ডাকাতি, চুরি, অপহরণ, শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, মাদক কেনাবেচাসহ পাঁচ লাখের বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মাঝে ২০০৯ সালে এক লাখ ৫৭ হাজার ১০৮টি; ২০১০ সালে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৪টি এবং ২০১১ সালের নভেম্বর মাস পর্যনৱ এ সংখ্যা এক লাখ ৩৭ হাজার। এ সময়ে সংবাদপত্রের ওপর হামলা-মামলা-খুনের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড মস্নান করে দিয়েছে। এদের হিসাব অনুসারে এ সময়ে ছয়জন সাংবাদিক নিহত, ২৮০ জন সাংবাদিক বিভিন্ন হামলায় আহত হন, লাঞ্ছিত হন ১১২ জন, হুমকির মুখোমুখি হন ৯৫ জন, মামলা হয় তিন ডজনের বেশি। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, সামান্য ঘটনার প্রতিবেদনের ওপর মানহানি মামলাসহ নানা ধরনের মামলার সংখ্যা বিশেষভাবে বেড়ে গেছে। অন্য একটি লৰণীয় বিষয় হলো, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে অথবা করার চেষ্টা চলছে। এসব ৰেত্রে আইনগত আশ্রয়ের আইনও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব ব্যাপকতা লাভ করছে। তবে নিবর্তনমূলক ব্যবস্থার জন্য তার প্রকাশ ঘটছে কম।
সবচেয়ে ভয়াবহ যে চিত্র এ প্রতিবেদনগুলো দিয়েছে তা হলো- খুন, রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বেওয়ারিশ লাশের ছড়াছড়ি। আর গুপ্তহত্যার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ২০১১ নভেম্বর পর্যনৱ খুন হয়েছেন ১২০০ ব্যক্তি। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫৯২ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৯০ জন। এসব নিহতের মাঝে আছেন কলেজশিৰক, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দ। নাটোর ও বড়াইগ্রামে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ সময় ইভটিজিংয়েই আত্মহত্যা করেছেন ১৫০ জন এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটজন অভিভাবক খুন হয়েছেন। শুধু ঢাকা শহর থেকেই উদ্ধার হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৬টি বেওয়ারিশ লাশ এবং সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক ১০০-এরও বেশি মানুষের কোনো খোঁজ মেলেনি।
গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে গুপ্তহত্যার ঘটনা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। ৯০ লাশের বর্ণনাগুলো ভয়াবহ। এর পরে রয়েছে আরো ভয়াবহ রিপোর্ট। ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যনৱ সীমানেৱ এক হাজার ১২ জনকে বিএসএফ হত্যা করে। আহত ও অপহরণ করে বহু নিরীহ বাংলাদেশীকে। গত তিন বছরের সবচেয়ে ভালো সম্পর্কের সময়েও ২৩১ জনকে বিএসএফ হত্যা করে। তবে স্মরণযোগ্য বিষয় হলো- ভারতের অন্য পাঁচটি দেশের সাথে তার সীমানৱ থাকলেও, সেসব সীমানেৱ বিশেষ করে তাদের সবচেয়ে বৈরী প্রতিবেশী পাকিসৱানের সীমানেৱ কোনো বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি গত ১০ বছরে। এক প্রতিবেদনে পাকিসৱানি দূতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সে দেশের জন্মের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যনৱ তাদের দেশের কোনো সীমানেৱই ভারতীয় বিএসএফ এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস পায়নি।
প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন এমনটি হচ্ছে বারবার। দীর্ঘ আলোচনা না করে, হয়তো বা তিনটি শব্দ দিয়ে এর কারণ বর্ণনা করা যায়। তা হোলো- অনৈতিকতা, অবৰয় ও ফ্যাসিজম। প্রথমে অনৈতিকতা- তার রাজত্ব পুরোপুরি কায়েম করলে জন্ম হয় অবৰয় এবং পরে ফ্যাসিজমের। আর এসবের মূলে ৰমতা ও সম্পদাহরণ। বলাই বাহুল্য, সাধারণ মানুষ নিজের যন্ত্রণাকে কখনো আহ্বান করে আনে না। তাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়। যেমন এখন বিশ্বব্যাপী ‘দারিদ্র্য’ নিয়ে চলছে ব্যবসায়। এবং সে ব্যবসায়ে সবাই ব্যসৱ। সুশীলসমাজ, করপোরেট ব্যবসায়ী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে দরিদ্র সাধারণ মানুষদের আরো শোষণ করছে, দরিদ্র দেশগুলোকে আরো নির্ভরশীল করে তুলছে। এখানে ৰমতাবান আর সম্পদলোভীদের এক কৌশলগত খেলা চলছে।
যেমন বাংলাদেশে এখন গরিব মানুষদের মাঝে শিৰাবিসৱারের নামে নানা অনানুষ্ঠানিক পাঠ্যদানের ব্যবস্থা ও অর্থ বিতরণের কর্মকাণ্ড চলছে। আর সংশিস্নষ্ট সংস্থা ও সরকার প্রতিদিনই এর সাফল্যের গীত গাইছে। কিন্তু বাসৱবতা হলো, শিৰা- যা সত্যিকারের বিসৱার লাভ করছে- তা সেই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাঝ দিয়েই। আর এখানে শুরম্ন হয়েছে ব্যবসায়ের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। এর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নেই। কারণ ৰমতাবানেরাই প্রধানত এ অসম ব্যবস্থার সাথে জড়িত। তবে কখনো কিছু ব্যবস্থা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে নিতে দেখা যায়। এগুলোর বেশির ভাগই সে প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য। আর এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত বিরোধী অংশের।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে সব পাওয়ার মাঝে কয়েকটি অত্যনৱ অনাকাঙিত অর্জনও ছিল। তা হলো- ৰমতাসীন ও তাদের সহযোগীদের নৈতিকতার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা, ৰমতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ, বিরোধী দমনে সীমাহীন অসংযত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতিতে আনন্দিত আহ্বান। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বললেন, ‘চাটার দল, সব খেয়ে যাচ্ছে।’ মজার কথা, এই চাটার দলের সবাই ছিল তার দলের লোক- যাদের বিরম্নদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বক্তব্য দিয়ে যন্ত্রণাকিষ্ট সাধারণ মানুষকে বিভ্রানৱ ও শানৱ রাখতে চাইলেন। সেই যে অনৈতিকতাপ্রসূত অনাচারের রাজত্ব কায়েম হোলো, তা গত চার দশকে শুধুই ডালপালা মেলেছে। যখনই কেউ এর সমালোচনা করেছেন, তাদের নানাভাবে নিন্দা করা হয়েছে। এটা তারা করেছেন তাদের অবৈধ সম্পদ ও ৰমতাকে রৰা করতে। এমনকি সমাজের প্রচলিত নৈতিকতাকেও তারা ভয় পান। কেননা মাত্র এই গুণটি তাদের ৰমতার অপব্যবহারকে সীমিত করে ফেলে এবং অবৈধ সম্পদ আহরণের পথে হয় বাধা। স্বাধীনতার পরের তিন বছরের অবস্থা একটু বিশেস্নষণ করলে দেখা যাবে যে, কত দ্রম্নত একটি ধনিক শ্রেণীর উদ্ভব হলো। সে সময়ে ৰমতাবান আর তো কেউ ছিল না। হঠাৎ করেই দেখা গেল সমাজের সম্মানিত ও অবস্থাপন্ন মানুষেরা হারিয়ে যাচ্ছেন আর তাদের স্থান দখল করছেন এই বিশেষ গোষ্ঠী, যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে পারঙ্গম।
নৈতিকতাহীন অবস্থা জন্ম দেয় অবৰয় ও ফ্যাসিজমের। এ দু’টি বৈশিষ্ট্য এমনই যে, এর ব্যবহার শুরম্ন হয়, কখনো শেষ হয় না। এর একমাত্র কারণ- ৰমতা। তাই বিখ্যাত মার্কিন রাজনীতিবিদ হেনরি অ্যাডামস ৰমতাকে একধরনের বিষের সাথে তুলনা করেছেন, যা অনৱর্নিহিত নৈতিকতাকে অন্ধ করে দেয় : Power is poison; and it is a poison, which blinds the eyes of moral insight and lames the will of moral purpose. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দাবিদারেরা কখনোই ভাবতে পারেন না এ দেশের জনগণেরও কোনো অধিকার আছে, কর্তব্য আছে, জনগণ ভাবতে পারে, স্বাধীন বক্তব্য দিতে পারে। যখন এসব ৰমতাবানের স্বার্থ রৰার প্রয়োজন হয়, তখনই তারা জনগণের বিশাল ত্যাগের ফিরিসিৱ দিয়ে, যেকোনো প্রতিবাদীকে ‘বলি’ দেয়ার জন্য তৎপর হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানপ্রণেতা জেমস ম্যাডিসন সম্ভবত এদের কথা ভেবেই স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারের চমৎকার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন : The accumulation of all powers, legislative, executive, judiciary, in the same hands... is the definition of tyranny. Ñ James Madison। গত চার দশক ধরেই ঠিক এই কর্মকাণ্ডটি ৰমতাবানেরা, বিশেষ করে স্বাধীনতার নেতৃত্বের দাবিদারেরা, অবিরাম চালু রেখেছেন। সম্ভবত এবারই ম্যাডিসনের বক্তব্যের পূর্ণ বাসৱবায়ন ঘটেছে।
ফলে দেখা যাচ্ছে আইন প্রণয়নকারী, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ডের মাঝে কোনো পার্থক্য লৰ করা যাচ্ছে না। বিচার বিভাগ যে বক্তব্য দিচ্ছে তা নির্বাহী বা আইন প্রণয়নকারীর মতোই প্রতিভাত হচ্ছে। বিচার ও রাজনীতির মাঝে কোনো পার্থক্য লৰ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বিচার বিভাগের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। জনগণের শেষ ভরসাস্থলও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এমনটি নতুন বলা যাবে না। ইউরোপে মধ্যযুগে এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। অ্যাডামস বলেছেন- এরপর যখন গণতন্ত্রের উদ্ভব হোলো, এ ৰমতাবানেরা কৌশলে একে নিজের স্বার্থে ব্যবহার শুরম্ন করল : The fact that democratic sentiment could be exploited to create a tyranny more sanguinary and terrible than those which it sought to ostensibly to destroy; that dream of equality, fraternity and liberty turned into nightmare.
অ্যাডামস যেন বাংলাদেশের ২০১২ সালের অবস্থার বিবরণ দিচ্ছেন প্রায় ১০০ বছর আগে। বর্তমানের ৰমতাসীনদের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর এক প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্য বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। থমাস জেফারসন বলেছিলেন, ‘স্বৈরাচার শুধু এটুকুই চায় যেন বিবেকবান মানুষ চুপ থাকে’ : All tyranny needs to gain a foothold is for people of good conscience to remain silent. আসলে গণতন্ত্রের উদ্ভবের পরে ৰমতালিপ্সু একদল মানুষ সব প্রথাকেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এরই পথ ধরে ফ্যাসিজমের জন্ম ও লালন। এসবের লালিত হওয়ার কারণ একটিই, তা হলো- সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষকে অন্য কোনো উপায়ে এত সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণে যা-ই নির্মাণ করছে- এই ৰমতালিপ্সুর দল তা কুৰিগত করে তাদের স্বার্থের কাজে লাগাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে গণতন্ত্রের অঙ্গনে। তাই তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতি এত উত্তপ্ত এবং জনগণ যন্ত্রণাকিষ্ট।
একটু নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ফ্যাসিবাদের দশটি পথের কথা এখানে উলেস্নখ করা যেতে পারে। নাওমি উলফের দেয়া হিটলার-মুসোলিনী-স্টালিনের পথগুলো হলো :
০১. Invoke a terryfying internal and external enemy : বাইরের ও ভেতরে শত্রম্নর কথা উলেস্নখ করে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেকোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে; প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করে এসব শত্রম্নদের বিরম্নদ্ধে জনগণকে শঙ্কায় ফেলতে হবে।
০২. Create a gulag : একবার সবাইকে ভয়ের মাঝে নীত করে সেই ‘গুলাগের’ সৃষ্টি করতে হবে যেখানে আইনের বাইরে হাজার হাজার মানুষকে অনৱরীণ রাখা হবে;
০৩. Develop a thug caste : এটা করার সাথে সাথে দলের একাংশ, বিশেষ করে যুব শ্রেণীকে নানা ধ্বংসাত্মক ও হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে- যেমন যুব, ছাত্র, কর্মী, শ্রমিক নামধারী সংগঠন- যা ইংরেজিতে বলে Thug caste- এদের অন্যায়কে সরকার সমর্থন করবে; ফলে সব সরকারি অন্যায়কে ‘গা-সওয়া’ মনে হবে এবং জনগণ প্রতিবাদের সাহস পাবে না।
০৪. Setup a surveillance system : অভ্যনৱরীণ কড়া নজরদারিব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে কোনো প্রতিবাদ বা সমালোচনা না হয়; এটা জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে বলে তারস্বরে প্রচার করতে হবে- তবে এর প্রধান কাজ হবে প্রতিপৰকে তীব্র হয়রানির মাঝে রাখা;
০৫. Harass citizens group : প্রতিটি দল চিহ্নিত করে তাদের নানা দুর্নামে ভূষিত করে, গোয়েন্দা ও দলীয় নানা বাহিনী দিয়ে অবিরাম হয়রানি করা;
০৬. Arbitrary detention of noted person : উলেস্নখযোগ্য ব্যক্তিদের যথেচ্ছ গ্রেফতার। যা নিয়ে এখন খবরের কাগজে প্রায়ই গ্রেফতার বাণিজ্যের কথা আসছে;
০৭. Target key persons : সমাজের বিভিন্ন মুখ্য ব্যক্তিদের লৰ্যে পরিণত করে তাদের ওপর নজর রাখা। এদের বিশ্বসৱ না মনে হলে এদের চাকরিচ্যুত, ব্যবসায় ৰতিকর বা অন্য যেকোনো উপায়ে এদের নিসৱব্ধ করে ফেলা;
০৮. Control the press : সবচেয়ে বড় কাজ সংবাদমাধ্যমকে সমপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। বারবার বন্ধ করে দিতে হবে অথবা হামলা-মামলা দিয়ে ভীত রাখতে হবে;
০৯. Dissent means treason : প্রতিবাদ অর্থ রাষ্ট্রদ্রোহ। কোনো আলোচনা, তথ্য বা বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করে তীব্র আন্দোলন করে, বশংবদের দ্বারা বিচারব্যবস্থায় নেয়া; এবং
১০. Suspend rule of law : আইনের শাসনের কথা জনগণকে ভুলতে বাধ্য করা হবে।
এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত এই ১০ অবস্থার মাঝ দিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। হিটলার আরো বলেছিলেন, ৰমতাবানদের মিথ্যে বলতে হবে, তবে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারণ জনগণ ভাবতেই পারে না সরকার এত বড় মিথ্যা বলতে পারে। তারপর সেই মিথ্যা বারবার বলবে, তখন আর জনগণকে নিয়ে ভাবতে হবে না। হিটলার তার ৰমতা চিরস্থায়ী
করার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সে চিত্র এখন
এত প্রকট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন